জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি

ফ্যাসিস্ট সরকারবিরোধী জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহিদদের প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে দেশে নানা বিতর্ক ও বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। সরকার, বিভিন্ন সংগঠন ও আন্তর্জাতিক সংস্থার দেয়া পরিসংখ্যান একে অপরের সঙ্গে মিলছে না। ডয়চে ভেলের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জানায়, জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদের সংখ্যা ৮৩৪ জন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি এ সংক্রান্ত একটি গেজেট প্রকাশ করেছে। তবে ‘জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন’-এর ওয়েবসাইটে (তারিখ: ৪ মে ২০২৫) শহিদের সংখ্যা দেখানো হয়েছে ৮২০ জনের কিছু বেশি, যা সরকার ঘোষিত সংখ্যার চেয়ে কম।
অন্যদিকে, সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী সম্প্রতি সচিবালয়ে এক প্রেস কনফারেন্সে জাতিসংঘের প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলেন, ১৪শ’ জনের বেশি মানুষকে ওই অভ্যুত্থানে হত্যা করা হয়েছে। তিনি সাংবাদিকদের ‘রিসার্চ’ করার আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের তথ্যকেই বিশ্বাসযোগ্য বলে দাবি করেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার হাই কমিশনারের কার্যালয়ের (OHCHR) ১২ ফেব্রুয়ারির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, জুলাই মাসে তৎকালীন সরকার ও তাদের সহযোগী বাহিনীগুলো ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে। ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্টের মধ্যে ১৪শ’র বেশি মানুষ নিহত এবং হাজার হাজার আহত হয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়। নিহতদের মধ্যে ১২-১৩ শতাংশ ছিল শিশু, পুলিশের ৪৪ কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের ১৪৪ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন বলেও তথ্য রয়েছে।
তবে জাতিসংঘ নিজেই বলেছে, সব মৃত্যুর তথ্য স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি, এবং আরও তদন্ত প্রয়োজন।
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ এক কর্মসূচিতে দাবি করেন, ১৪শ’ জনের বেশি শহিদ ও প্রায় ৩০ হাজার আহত হয়েছেন। একই দাবির পুনরাবৃত্তি করেছেন উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলমও, যিনি বলেন, আওয়ামী লীগ জেলার পর জেলা বৈষম্য করেছে এবং রক্তের উপর দাঁড়িয়ে রাজনীতি করছে।
২০২৪ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংবাদ সম্মেলনে শহিদের সংখ্যা জানানো হয় ১,৫৮১ জন, তবে এটিও ছিল অস্থায়ী হিসাব।
সরকারের দিক থেকে স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত ৮৩৪ জন শহিদের নাম গেজেটে প্রকাশ করা হয়েছে এবং বাকি দাবিগুলো এখনো যাচাই-বাছাইয়ের পর্যায়ে রয়েছে। সরকারের লক্ষ্য, একটি নির্ভুল ও বিতর্কহীন তালিকা তৈরি করা।
এই প্রক্রিয়াকে ‘চরম ব্যর্থতা’ আখ্যা দিয়েছেন প্রবীণ সাংবাদিক মাসুদ কামাল। তিনি বলেন, এত সহজ একটি কাজ সরকার অকারণে জটিল করে তুলেছে এবং এতে ভবিষ্যতে আরও সমস্যা তৈরি হবে। তিনি দাবি করেন, আন্দোলনের আসল শহিদ ও আহতদের বাদ দিয়ে সুবিধাভোগীরা এখন মুনাফা করছে, যাদের অনেকেই ওই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্তই ছিলেন না।
তিনি আরও প্রশ্ন তুলেছেন, যেখানে জাতিসংঘ প্রতিনিধি দল একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন তৈরি করতে পেরেছে, সেখানে সরকারের মতো একটি শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান কেন তা পারেনি? তিনি এটিকে সরকারের ব্যর্থতা এবং লজ্জাজনক অবস্থান বলেও মন্তব্য করেন।