Health & Wellbeing

৩০ পার হলে যেসব পুষ্টির ঘাটতি পূরণ করা জরুরি হয়ে পড়ে

ত্রিশের কোঠায় পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ভেতরে শুরু হয় কিছু সূক্ষ্ম পরিবর্তন, যা হয়তো চোখে পড়ে না তবে দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব পড়ে স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ওপর। এ সময় জীবনযাপনের ধরন, মানসিক চাপ, ও পুষ্টির চাহিদার ভারসাম্য রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে ওঠে।

পুষ্টিবিদরা মনে করেন, ৩০ বছর পার হওয়ার পর নিয়মিত কিছু প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ করলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যেমন বাড়ে, তেমনি দীর্ঘমেয়াদি সুস্থতাও নিশ্চিত হয়। তবে মনে রাখতে হবে সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ মানেই বয়স নিয়ে আতঙ্ক নয়, বরং এটি একটি সচেতন স্বাস্থ্য প্রস্তুতির অংশ।

নিচে ৩০-এর পর যেসব পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি দেখা দিতে পারে এবং যেগুলোর সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ উপকারী হতে পারে, তার একটি তালিকা তুলে ধরা হলো:

১. মাল্টিভিটামিন

ব্যস্ত জীবন, অনিয়মিত বা সীমিত ডায়েটের কারণে শরীরে ভিটামিন বি, জিংক, আয়রন বা ফলেটের ঘাটতি দেখা দিতে পারে। উচ্চমানের মাল্টিভিটামিন এসব ঘাটতি পূরণে সহায়ক হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দেন—মিথাইলেটেড বি১২ ও ফলেট, কেলেটেড মিনারেল এবং অতিরিক্ত ডোজবিহীন মাল্টিভিটামিন বেছে নেওয়াই ভালো।

২. ক্যালসিয়াম (ভিটামিন D3 ও K2 সহ)

ত্রিশের পর থেকে হাড়ের ঘনত্ব কমতে শুরু করে, বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে। শুধু ক্যালসিয়াম নয়—হাড়ে এর সঠিক শোষণের জন্য দরকার হয় ভিটামিন D3 ও K2। এসবের অভাবে ক্যালসিয়াম হাড়ে না জমে রক্তনালিতে জমতে পারে, যা স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। দুধ, শাকসবজি ও বীজজাতীয় খাবারেও ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়।

৩. ভিটামিন সি

ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হলেও এটি ঠান্ডা পুরোপুরি প্রতিরোধ করে নাতবে সংক্রমণের সময়কাল কমাতে পারে। ত্রিশের পর স্ট্রেস, দূষণ ও ঘুমের অভাবে ভিটামিন সি-এর চাহিদা বাড়ে। এটি ত্বকে কোলাজেন গঠন, আয়রনের শোষণ ও কোষ মেরামতের কাজেও গুরুত্বপূর্ণ।

৪. আয়রন

শক্তি, রক্তে অক্সিজেন পরিবহন এবং মানসিক সুস্থতায় আয়রনের ভূমিকা অপরিহার্য। তবে অতিরিক্ত আয়রন শরীরে জমে গিয়ে ক্ষতির কারণ হতে পারে। ক্লান্তি, মাথাব্যথা বা ফ্যাকাশে ভাব দেখা দিলে আগে রক্ত পরীক্ষা করানো জরুরি। নারীরা, নিরামিষভোজীরা, বা হজম সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য আয়রন সাপ্লিমেন্ট গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।

৫. প্রোটিন পাউডার

ত্রিশের পর শরীরে পেশির ভর (muscle mass) কমতে থাকে যাকে বলে সারকোপেনিয়া। প্রোটিন শুধু শরীরচর্চা নয়, বরং রোগ প্রতিরোধ, বিপাকক্রিয়া ও গঠন রক্ষায় প্রয়োজনীয়। যারা প্রতিদিনের খাবারে প্রোটিন ঠিকমতো পান না, তাদের জন্য ক্লিন হুই বা প্ল্যান্ট-বেসড প্রোটিন পাউডার কার্যকর হতে পারে।

৬. বায়োটিন (ভিটামিন বি৭)

চুল ও নখের জন্য বিখ্যাত হলেও বায়োটিন কেবল তখনই কার্যকর, যখন শরীরে এর ঘাটতি থাকে। স্ট্রেস, সন্তান জন্মের পর বা চুল পড়ার সমস্যায় জিংক, আয়রন ও সিলিকা সহ বায়োটিন সমন্বিতভাবে কাজ করে। তবে অকারণে বেশি ডোজ গ্রহণ না করাই ভালো, কারণ এতে পরীক্ষার ফলাফলে প্রভাব পড়তে পারে।

ত্রিশে পা দেওয়া মানে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ছে এমনটি নয়। বরং এটি একটি নতুন স্বাস্থ্য সচেতন অধ্যায়ের সূচনা। এই বয়স থেকেই সঠিক খাদ্যাভ্যাস, প্রয়োজনীয় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ এবং স্বাস্থ্যকর জীবনযাত্রা অনুসরণ করলে ভবিষ্যতের রোগ প্রতিরোধ এবং সুস্থ বার্ধক্য নিশ্চিত করা সম্ভব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button