হঠাৎ করে মিষ্টি খেতে মন চায়? জানুন এর পেছনের কারণ

অনেক সময় এমন হয় পেট ভরা থাকা সত্ত্বেও হঠাৎ করেই মিষ্টি খাওয়ার ইচ্ছে জেগে ওঠে। কেউ চকলেট খেতে চায়, কেউবা কেক, পেস্ট্রি বা মিষ্টি। এটা কেবল এক রকম খিদে নয়, এর পেছনে আছে মস্তিষ্কের একটি বিশেষ অংশের কাজ হিপোক্যাম্পাস। এই অংশটি আমাদের মিষ্টি খাওয়ার পুরনো আনন্দময় স্মৃতি মনে করিয়ে দেয়, ফলে আচমকা সেই স্বাদ ফিরে পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়।
শুধু স্মৃতি নয়, এই আচরণের সঙ্গে জড়িত মস্তিষ্কের হরমোনের ভারসাম্য। ডোপামিন ও সেরোটোনিন নামের নিউরোট্রান্সমিটার যখন আমাদের শরীরে নিঃসৃত হয়, তখন মন আনন্দে ভরে ওঠে। কিন্তু যখন এই হরমোনের ঘাটতি দেখা দেয়, তখন মানুষ বিষণ্নতায় ভোগে এবং তা থেকে মুক্তি পেতে চায় মিষ্টি খাবারের মাধ্যমে।
আমাদের এই আচরণের পেছনে রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস। আমাদের পূর্বপুরুষেরা যখন খাদ্যসংকটে ভুগতেন, তখন উচ্চ-ক্যালরিযুক্ত খাবার যেমন মধু বা পাকা ফল পেলে তা দ্রুত খেয়ে ফেলতেন কারণ এতে দ্রুত শক্তি পাওয়া যেত। সেই প্রবণতা আজও আমাদের জিনে রয়ে গেছে।
এছাড়া রক্তে শর্করার ওঠানামাও এর কারণ। চিনি খাওয়ার পর রক্তে গ্লুকোজ বেড়ে যায়, সঙ্গে ইনসুলিন। এই শর্করা হঠাৎ কমে গেলে মস্তিষ্ক আবার মিষ্টি চায়। সঙ্গে যোগ হয় ঘ্রেলিন ও লেপ্টিনের মত হরমোন, যা আমাদের খাওয়ার ইচ্ছা ও তৃপ্তির অনুভূতিকে গুলিয়ে ফেলে।
তবে মনে রাখা জরুরি অতিরিক্ত মিষ্টি খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এটি ডায়াবেটিস, স্থূলতা, হৃদরোগ এমনকি মানসিক চাপও বাড়াতে পারে। তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
সমাধান হিসেবে চিকিৎসকরা বলেন, পুরোপুরি বাদ না দিয়ে অল্প করে খাওয়া ভালো। প্রক্রিয়াজাত মিষ্টির বদলে ফল খাওয়া যেতে পারে, কিংবা মিষ্টির ইচ্ছা হলে এক কাপ হালকা গরম চা হতে পারে বিকল্প। পাশাপাশি ‘মাইন্ডফুল ইটিং’ চর্চা করা অর্থাৎ, সত্যিকারের ক্ষুধা আর অভ্যাসগত লোভের পার্থক্য বুঝে খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা।
মিষ্টির প্রতি আকর্ষণ স্বাভাবিক, কিন্তু পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ জরুরি। নিজের শরীরের ভাষা বোঝা ও সচেতনভাবে খাওয়ার মাধ্যমেই সম্ভব এক স্বাস্থ্যকর জীবনের দিকে এগিয়ে যাওয়া।