ফিউচার দেশের উদ্যোগে লক্ষীপুরে কৃষি প্রকল্প: গ্রামীণ উন্নয়নের নতুন দিগন্ত
বাংলাদেশের ময়মনসিংহ বিভাগের নেত্রকোনা জেলার সুসং দুর্গাপুর উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের লক্ষীপুর গ্রামের গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটছে। ধানের খেত, চারণভূমি, এবং ছোট ছোট গ্রামের মাঝখানে অবস্থিত এই এলাকা ভবিষ্যতের একটি নতুন প্রকল্পের কেন্দ্রবিন্দু হতে চলেছে, যা কৃষির পদ্ধতি এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে নতুনভাবে গড়ে তুলবে। ফিউচারদেশের এই সাহসী উদ্যোগের লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের সাথে স্থানীয় কৃষকদের সংযুক্ত করা, যা অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির সুযোগ সৃষ্টি করবে।
ফিউচারদেশ, একটি উদ্ভাবনী সামাজিক পুঁজি বিনিয়োগ সংস্থা, ময়মনসিংহে চারটি কন্ট্রাক্ট ফার্মিং কৃষি ক্লাস্টার শুরু করেছে, যার মধ্যে লক্ষ্মীপুর অন্যতম। ক্লাস্টার ম্যানেজার প্রতুল ঘাগরা’র নেতৃত্বে, ৪৫ জন কৃষক পশু পালন, প্রাকৃতিক খাদ্য উন্নয়ন, এবং ভবিষ্যতের কৃষি প্রকল্পে কাজ করছেন। তবে এই মডেলের বিশেষত্ব হলো বিনিয়োগকারী( ইনভেস্টর) এবং কৃষকের মধ্যে মুনাফা ভাগাভাগির ধারণা, যা কৃষির প্রচলিত পদ্ধতিগুলো থেকে আলাদা।
মুনাফা ভাগাভাগির শক্তি
অনেক বছর ধরে, কৃষকরা বাজারের মূল্য পরিবর্তন এবং ফলনের অনিশ্চয়তার সম্মুখীন হচ্ছেন। ফিউচারদেশ এই পরিস্থিতি পরিবর্তন করছে একটি ৫০/৫০ মুনাফা ভাগাভাগির মডেল তৈরি করে, যেখানে কৃষক এবং বিনিয়োগকারী(ইনভেস্টর) মুনাফা ও ঝুঁকি সমানভাবে ভাগাভাগি করেন। এই নতুন পদ্ধতি লক্ষিপুরের কৃষকদের জন্য আর্থিক স্থিতিশীলতা নিয়ে আসছে, যাতে তারা বাজারের অস্থিরতা নিয়ে দুশ্চিন্তা না করে তাদের পশু পালন ও ফসলের মান উন্নত করতে পারে।
প্রতুল ঘাগরা বলেন, “মুনাফা ভাগাভাগি আমাদের আত্মবিশ্বাস দেয়। বাজারের অস্থিতিশীল মূল্য নিয়ে চিন্তা না করে, কৃষকরা জানেন যে তারা একটি নিশ্চিত অংশীদারিত্ব পেয়েছেন। ইনভেস্টরদের সাথে তারা সমানভাবে মুনাফা ও রিক্স ভাগ করে, যা কৃষকদেরকে আরও উদ্ভাবনী এবং উন্নতির জন্য উৎসাহিত করে।”
বৈশ্বিক মূলধনকে গ্রামীণ কৃষিতে নিয়ে আসার প্রত্যয়
ফিউচারদেশ এই প্রকল্পটি মূলত সামাজিক পুঁজি (সোশ্যাল ভেঞ্চার) নিয়ে কাজ করছে। যুক্তরাজ্য এবং আন্তর্জাতিক ইনভেস্টর থেকে অর্থ সংগ্রহ করে, বিশেষ করে বাংলাদেশের প্রবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে, তারা লক্ষ্মীপুরের কৃষকদের সাথে অংশীদারিত্ব করছে। এই বিনিয়োগকারীরা শুধু দান করছেন না—তারা লক্ষিপুরের কৃষি প্রকল্পে নিজেরাও বিনিয়োগ করছেন, যার মাধ্যমে আর্থিক এবং সামাজিক উন্নয়ন উভয়ই অর্জন হচ্ছে।
পশু পালনের পাশাপাশি, ফিউচারদেশ ক্যাশ ক্রপ এবং ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প প্রকল্পগুলোও শুরু করার পরিকল্পনা করছে। লক্ষিপুরের ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, বিশেষ করে গৃহস্থালী টেক্সটাইল, বিশ্ববাজারের জন্য উৎপাদিত হবে, যা স্থানীয় কৃষকদের আয় বৃদ্ধি করতে এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষা করতে সহায়তা করবে।
গ্রামীণ অর্থনীতি ও জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তন
এই উদ্যোগের প্রভাব শুধুমাত্র অর্থনৈতিক নয়, বরং লক্ষ্মীপুরের জীবনযাত্রা পরিবর্তন করবে পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হবে, এবং উন্নত চাষাবাদ, পশু পালন এবং হস্তশিল্পের কারণে কৃষকদের জীবনমানের উন্নতি হবে।
“মাই ভিলেজ প্রজেক্ট”-এর মাধ্যমে প্রতিটি গ্রাম বৃক্ষরোপণ, সেচ ব্যবস্থা, এবং নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্পে অংশ নেবে। এটি শুধুমাত্র পরিবেশ সুরক্ষায় সাহায্য করবে না, বরং গ্রামীণ মানুষের জীবনযাত্রাও বদলাবে।
ভবিষ্যতের পথে
লক্ষিপুরের এই পরিবর্তন বাংলাদেশের গ্রামীণ উন্নয়নের একটি মডেল হিসেবে কাজ করবে। ফিউচারদেশের মুনাফা ভাগাভাগির মডেল স্থানীয় কৃষকদেরকে আর্থিক স্বনির্ভরতার পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে । একই সাথে, বিনিয়োগকারীদের জন্যও এটি একটি লাভজনক আয়ের সুযোগ তৈরি করছে।
যেভাবে প্রতিদিন ভোরের সূর্য লক্ষিপুরের উপর উদিত হয়, সেভাবেই এই অঞ্চলের কৃষি ও অর্থনীতিতে একটি নতুন দিনের সূচনা হচ্ছে—একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের পথে, যেখানে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারী( ইনভেস্টর) এবং স্থানীয় কৃষকরা একসাথে কাজ করে একটি সমৃদ্ধশালী গ্রামীণ জীবন গড়ে তুলছেন।