গ্রামীণ ব্যাংককে ২০২৯ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি: নতুন প্রজ্ঞাপনে এনবিআরের সিদ্ধান্ত

বাংলাদেশে গ্রামীণ ব্যাংকের জন্য নতুন করে কর অব্যাহতির প্রজ্ঞাপন জারির বিষয়টি আলোচনা করছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ঘোষণা করেছে যে গ্রামীণ ব্যাংক আগামী পাঁচ বছর, অর্থাৎ ২০২৯ সাল পর্যন্ত তার সমস্ত আয় আয়কর থেকে অব্যাহতি পাবে। এ সিদ্ধান্তটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, কারণ এই ব্যাংক অতীতে কর অব্যাহতি সুবিধা ভোগ করলেও ২০২১ সালে তা বাতিল হয়েছিল।
গ্রামীণ ব্যাংকের কর অব্যাহতির ইতিহাস
১৯৮৩ সালে সামরিক অধ্যাদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রামীণ ব্যাংক কর অব্যাহতির সুবিধা পেয়ে আসছিল। তাদের ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম এবং দারিদ্র বিমোচন ও নারী ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে কাজ করার কারণে এটি কর ছাড় পেত। ২০১৩ সালে অধ্যাদেশটি আইন হিসেবে রূপান্তরিত হলেও ব্যাংকটির কর অব্যাহতি সুবিধা অব্যাহত ছিল। তবে ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে আগের আওয়ামী লীগ সরকার এই সুবিধা বন্ধ করে দেয়। এনবিআরের বর্তমান কর্মকর্তারা বলছেন, ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মতোই গ্রামীণ ব্যাংককে কর অব্যাহতি ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যা আইনের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ।
নতুন করে কর অব্যাহতি দেওয়া হলো কেন?
২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেয়। পরে গ্রামীণ ব্যাংক কর অব্যাহতির জন্য আবেদন করে এবং এনবিআর সেই আবেদন অনুমোদন করে। এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করা অন্যান্য সংস্থার মতো গ্রামীণ ব্যাংকও কর অব্যাহতির যোগ্য, তাই তাদের ক্ষেত্রে আইনানুযায়ী এই সুবিধা ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
সমালোচনা ও যৌক্তিকতা
এনবিআরের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে সমালোচকরা মনে করছেন, অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে এই সুবিধা পুনরুদ্ধার রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হতে পারে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, গ্রামীণ ব্যাংক যেমন ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান করে দারিদ্র বিমোচনে সহায়তা করছে, সেই প্রেক্ষিতে তাদের কর অব্যাহতি পাওয়া যৌক্তিক। তবে, ২০২১ সালে এটি বাতিল করার পেছনে রাজনৈতিক প্রভাব ছিল বলেও অনেকেই মত দেন।
অন্য প্রতিষ্ঠানের কর অব্যাহতি
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে যে একই সঙ্গে অলাভজনক ধর্মীয় সংস্থা আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনকেও কর অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, যদিও এটি নিয়ে তেমন কোনো সমালোচনা দেখা যায়নি। অর্থনীতিবিদদের মতে, জনকল্যাণমূলক কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কর ছাড় দেওয়া সাধারণ ঘটনা, তবে এর আইনি প্রক্রিয়ায় কিছু অস্পষ্টতা থাকার কারণে নানা সময় ভিন্নমত দেখা যায়।
উপসংহার
গ্রামীণ ব্যাংককে ২০২৯ সাল পর্যন্ত কর অব্যাহতি দেওয়া এনবিআরের সিদ্ধান্ত, যা তাদের ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের জন্য পুনর্বহাল করা হয়েছে। যদিও এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে, তবে বিশ্লেষকরা বলছেন যে সামাজিক উন্নয়ন ও দারিদ্র বিমোচনের মতো কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্ষেত্রে কর অব্যাহতি দেওয়া সাধারণত ন্যায্যতা এবং সমতার ভিত্তিতে হয়ে থাকে।