পায়ে দেখা দিলেই সতর্ক হোন: এই ৫ লক্ষণ ইঙ্গিত দিতে পারে ভয়াবহ বিপদের

অনেক সময় আমরা শরীরের ছোট ছোট সংকেতকে গুরুত্ব না দিয়ে উপেক্ষা করে থাকি। কিন্তু জানেন কি, এই ছোট ছোট লক্ষণই হতে পারে গুরুতর রোগের প্রাথমিক বার্তা? বিশেষ করে পায়ে দেখা দেওয়া কিছু লক্ষণ, যেগুলোর পেছনে থাকতে পারে জটিল শারীরিক সমস্যা।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শরীরের অনেক সমস্যার প্রথম লক্ষণ পায়ে দেখা দেয়। কারণ পা দীর্ঘ সময় ধরে শরীরের ভার বহন করে এবং রক্ত চলাচল, স্নায়ু ও জয়েন্টের অবস্থা সরাসরি প্রভাব ফেলে সেখানে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে এমনই কিছু লক্ষণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যা অগ্রাহ্য করা বিপজ্জনক হতে পারে।
১. পা সবসময় ঠান্ডা অনুভব করা
যখন চারপাশের তাপমাত্রা স্বাভাবিক বা গরম থাকা সত্ত্বেও আপনার পা ঠান্ডা থাকে, এটি হতে পারে রক্ত সঞ্চালনের দুর্বলতার লক্ষণ।
🔸 সম্ভাব্য কারণসমূহ:
- পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ (PAD) – যেখানে রক্তনালির দেয়ালে চর্বি জমে রক্তপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হয়
- হৃদরোগ বা ডায়াবেটিস
- হাইপোথাইরয়েডিজম – থাইরয়েড হরমোনের অভাব পায়ের উষ্ণতা কমিয়ে দেয়
উপেক্ষা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন, কারণ এটি হার্টের ঝুঁকির আগাম বার্তা হতে পারে
২. পা ঝিনঝিন করা বা সূঁচ বেঁধানো অনুভূতি
আপনার পায়ে যদি প্রায়ই ঝিনঝিন বা অসাড় অনুভূতি হয়, তাহলে এটি স্নায়বিক ক্ষতির লক্ষণ হতে পারে।
🔸 সম্ভাব্য কারণসমূহ:
- ডায়াবেটিক নিউরোপ্যাথি – রক্তে শর্করা বেড়ে গেলে স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হয়
- ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতি
- অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ
এই লক্ষণ অব্যাহত থাকলে দ্রুত স্নায়ু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয়া জরুরি।
৩. গোড়ালিতে ব্যথা ও হাঁটুর নিচে অস্বস্তি
সকালে ঘুম থেকে উঠে গোড়ালিতে তীব্র ব্যথা হলে সেটি হতে পারে প্ল্যান্টার ফাসাইটিস।
🔸 সম্ভাব্য কারণসমূহ:
- পায়ের টিস্যুতে প্রদাহ
- রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস
- অ্যাঙ্কাইলোজিং স্পন্ডিলাইটিস – অটোইমিউন সমস্যা যা জয়েন্টে ব্যথা সৃষ্টি করে
উপেক্ষা করলে ব্যথা আরও বাড়তে পারে এবং হাঁটাচলার ক্ষমতা প্রভাবিত হতে পারে।
৪. হঠাৎ টান ধরা বা হাঁটার সময় পা ‘ঝরে পড়া’
হাঁটার সময় বারবার পায়ে টান লাগা, হোঁচট খাওয়া, বা পায়ের পাতায় দুর্বলতা হতে পারে স্নায়বিক রোগের ইঙ্গিত।
🔸 সম্ভাব্য কারণসমূহ:
- মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস
- স্ট্রোকের পূর্ব লক্ষণ
- স্নায়ুর ওপর চাপ পড়া (স্লিপড ডিস্ক)
চিকিৎসা না করলে সমস্যাটি ধীরে ধীরে পুরো পা ও শরীরে প্রভাব ফেলতে পারে।
৫. পায়ে বারবার চুলকানি বা ত্বক ফাটা
এটি হতে পারে ছত্রাক সংক্রমণ বা অ্যাথলিটস ফুট।
🔸 সম্ভাব্য কারণসমূহ:
- পায়ের চামড়া অতিরিক্ত শুষ্ক হওয়া
- ফাঙ্গাল ইনফেকশন
- ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে
- একজিমা বা সোরিয়াসিসের মতো ত্বক রোগ পা থেকেই শুরু হতে পারে
নিয়মিত পরিষ্কার রাখা, স্যান্ডেল পরা ও চিকিৎসা নেয়া এই সমস্যায় উপকার দিতে পারে।
পায়ের এই লক্ষণগুলোকে অবহেলা না করে গুরুত্ব দিন। শরীরের যে অংশটি সারাদিন আপনার ওজন বহন করে, সেটি যদি অসুস্থতার সংকেত দেয়, তাহলে তা অবশ্যই আমলে নেওয়ার মতো। প্রাথমিক পর্যায়ে সচেতন হলে অনেক জটিল রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।