Bangladesh - BanglaHealth & BeautyHealth & WellbeingNewsUK - Bangla

ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কে ঘটে ভয়াবহ পরিবর্তন: দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের অভাব মস্তিষ্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে!

সম্প্রতি একটি গবেষণায় উঠে এসেছে যে, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্ক নিজেই নিজেকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে শুরু করে। বিশেষত, দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কের প্রতিরক্ষা কোষগুলো অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা পরিণতিতে স্নায়ুবিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। মস্তিষ্কের গ্লিয়াল কোষগুলি সাধারণত শরীরের বর্জ্য পরিষ্কার রাখার কাজ করে, কিন্তু ঘুমের অভাবে এগুলো অত্যধিক সক্রিয় হয়ে উঠে, এবং এতে মস্তিষ্কের প্রয়োজনীয় স্নায়ু সংযোগ ও আবর্জনা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

গবেষণার ফলাফল থেকে জানা গেছে, ঘুমের অভাবে ইঁদুরের শরীরে বিশেষ ধরনের কোষ – এস্ট্রোসাইটগুলি, যেগুলি স্নায়ু সংযোগ বা সিন্যাপ্স অপসারণের জন্য দায়ী, তারা অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে মস্তিষ্কের অপ্রয়োজনীয় বা ক্ষতিগ্রস্ত সংযোগগুলোও ধ্বংস করে দেয়। প্রথম দিকে, এটি মস্তিষ্কের জন্য উপকারী মনে হলেও, কারণ এটি সৃষ্টির পাশাপাশি পুরনো স্নায়ু সংযোগগুলো পুনর্গঠনে সাহায্য করতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের অভাব এটি বিপজ্জনক করে তোলে।

গবেষণা অনুসারে, ঘুম-বঞ্চিত অবস্থায় মস্তিষ্কের মাইক্রোগ্লিয়াল কোষগুলোও অতিরিক্ত সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই কোষগুলো সাধারণত মৃত কোষ ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান পরিষ্কার করার কাজ করে, কিন্তু ঘুমের অভাবে এটি অতিরিক্ত হয়ে মস্তিষ্কের ক্ষতি সাধন করতে পারে। এ ধরনের অতিরিক্ত সক্রিয়তা মস্তিষ্কে স্নায়ুবিক রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়, যেমন আলঝাইমার রোগ ও অন্যান্য নিউরোডিজেনারেটিভ সমস্যা।

গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কের এস্ট্রোসাইট কোষগুলি তার প্রয়োজনীয় স্নায়ু সংযোগ এবং আবর্জনাগুলিকে খেয়ে ফেলে, যার ফলে বিশেষত বড় ও পরিণত সিন্যাপ্সগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এটি ডিমেনশিয়া ও অন্যান্য স্নায়ুবিক রোগের ঝুঁকি বাড়ানোর বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে। ১৯৯৯ সালের পর থেকে আলঝাইমার রোগে মৃত্যুর হার ৫০% বেড়ে গেছে, যা ঘুমের অভাব ও স্নায়ুবিক রোগের মধ্যে সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়।

ঘুমের সময় মস্তিষ্ক নিজেকে পুনরুদ্ধার করে, সারা দিনের কার্যক্রমের কারণে জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করে এবং স্মৃতিগুলি সংরক্ষণ করে। তবে, ঘুমের অভাব মনোযোগের ঘাটতি, সমস্যা সমাধানের দক্ষতা কমিয়ে দেয় এবং মানসিক কার্যক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। গবেষণার ফলাফল জানায়, দীর্ঘমেয়াদী ঘুমের অভাব স্নায়ুবিক রোগের বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারে, বিশেষত আলঝাইমার রোগের মত জটিল সমস্যার দিকে।

একদিকে, ঘুম নতুন শিক্ষাগ্রহণ ও স্মৃতি গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় স্নায়ু সংযোগকে শক্তিশালী করে, অপরদিকে, অপ্রয়োজনীয় সংযোগগুলো অপসারণ করে, যা মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। মস্তিষ্কের গ্লিম্ফাটিক সিস্টেম, যা বর্জ্য পদার্থ অপসারণে সক্রিয় থাকে, ঘুমের সময় বিশেষভাবে কাজ করে। ঘুমের অভাবের কারণে এই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়, যার ফলে স্নায়ুবিক রোগের ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

অন্যদিকে, ঘুমের অভাব মানসিক সুস্থতাও বিপন্ন করে। এটি ব্যক্তির মেজাজ খিটখিটে করে, স্ট্রেস বাড়িয়ে দেয় এবং মানসিক চাপের প্রতিক্রিয়া তীব্র করে তোলে। ঘুমের অভাবে মস্তিষ্কের নমনীয়তা কমে যায়, যার ফলে শেখার দক্ষতা ও নতুন অভিজ্ঞতার সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা হ্রাস পায়।

ঘুমের পর্যায়ভিত্তিক কাজের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্য। REM (Rapid Eye Movement) ঘুম সৃজনশীলতা এবং আবেগ প্রক্রিয়াকরণের জন্য অপরিহার্য, আর স্লো-ওয়েভ ঘুম স্মৃতি সংরক্ষণ এবং শারীরিক পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয়। ঘুম হরমোন নিয়ন্ত্রণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, যার মাধ্যমে ক্ষুধা, মানসিক চাপ এবং শারীরিক বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত হয়। ঘুমের অভাবে স্থূলতা, ডায়াবেটিস এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যায়।

অতএব, সুস্থ ও দীর্ঘমেয়াদী মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বজায় রাখতে নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। ঘুম শুধু বিশ্রামের সময় নয়, এটি মস্তিষ্কের সুস্থতা এবং স্নায়ুবিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। ঘুমের অভাব শুধু অস্থায়ী ক্লান্তির কারণ নয়, বরং এটি দীর্ঘমেয়াদী স্নায়ুবিক সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি মস্তিষ্ক নিজেই নিজেকে ধ্বংস করতে শুরু করতে পারে।

সূত্র: সায়েন্স মিউজিয়াম অব ভার্জিনিয়া

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button