Health & WellbeingReligion

অন্তঃসত্ত্বা ও দুগ্ধদানকারী নারীদের জন্য রোজার বিধান

রমজান মাসে রোজা রাখা প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মুসলিমের জন্য ফরজ। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে:

“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের ওপর, যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পারো।”
(সূরা বাকারা: ১৮৩)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেছেন:

“রমজান মাস—যার মধ্যে কুরআন নাযিল করা হয়েছে লোকেদের পথপ্রদর্শক এবং হেদায়াতের সুস্পষ্ট বর্ণনারূপে ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে রোজা রাখে। আর যে অসুস্থ কিংবা সফরে আছে, সে অন্য সময় এ সংখ্যা পূরণ করবে।”
(সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

এই আয়াত থেকে বোঝা যায়, সফর বা অসুস্থতার কারণে রোজা রাখার ক্ষেত্রে শিথিলতা রয়েছে। অন্তঃসত্ত্বা ও দুগ্ধপান করানো নারীর ক্ষেত্রেও বিশেষ কিছু বিধান রয়েছে।

👉 রোজা রাখতে পারবেন:

  • যদি রোজা রাখায় মা বা শিশুর কোনো ক্ষতির আশঙ্কা না থাকে, তবে অন্তঃসত্ত্বা নারী রোজা রাখতে পারেন।

👉 রোজা না রাখার অনুমতি:

  • যদি রোজা রাখার ফলে মায়ের স্বাস্থ্যহানি হয় বা অনাগত সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী রোজা না রাখার অনুমতি রয়েছে।
  • পবিত্র কুরআনের বিধান অনুসারে, এ ধরনের পরিস্থিতিতে পরবর্তী সময়ে রোজার কাজা আদায় করতে হবে, কিন্তু কাফফারা দিতে হবে না।

হাদিসে এসেছে:
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ মুসাফিরের জন্য রোজা হালকা করেছেন এবং গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীদের জন্য রোজা মাফ করেছেন।” (তিরমিজি: ৭১৫, আবু দাউদ: ২৪০৮)

দুগ্ধপান করানো নারীর জন্য বিধান

  • যদি রোজা রাখার ফলে মায়ের দুধের পরিমাণ কমে যায় এবং শিশুর পুষ্টিতে সমস্যা হয়, তাহলে তিনি রোজা ভাঙতে পারেন।
  • সুস্থ হলে সেই রোজাগুলো কাজা করে নিতে হবে, তবে কাফফারা দিতে হবে না।

অন্তঃসত্ত্বা ও দুগ্ধদানকারী নারীদের জন্য রোজার প্রস্তুতি

যদি কোনো অন্তঃসত্ত্বা বা দুগ্ধদানকারী নারী রোজা রাখতে চান, তবে কিছু সতর্কতা ও সুপারিশ মেনে চলা উচিত:

✅ শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখা: বিশ্রামের পরিমাণ বাড়ানো ও দুশ্চিন্তা এড়িয়ে চলা।
✅ পর্যাপ্ত পানি পান: ইফতার থেকে সেহরির মধ্যে প্রচুর পানি পান করা (১০-১২ গ্লাস)।
✅ সঠিক খাদ্যাভ্যাস:

  • সেহরিতে ফাইবারসমৃদ্ধ খাবার (ওটস, শাকসবজি, বাদাম) গ্রহণ করা।
  • ভাজাপোড়া ও অতিরিক্ত তেল-চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করা।
  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিস থাকলে অতিরিক্ত চিনি ও মিষ্টিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা।
  • অতিরিক্ত পরিশ্রম এড়িয়ে চলা: ভারি কিছু বহন না করা ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা।

অন্তঃসত্ত্বা ও দুগ্ধদানকারী নারীরা শরীরের সুস্থতা বিবেচনা করে রোজা রাখতে পারেন। তবে রোজা রাখার ফলে যদি মা বা সন্তানের জন্য ক্ষতির আশঙ্কা থাকে, তাহলে রোজা ভাঙার অনুমতি রয়েছে এবং পরবর্তী সময়ে কাজা করা আবশ্যক। শরীর সুস্থ থাকলে নির্দিষ্ট কিছু নিয়ম মেনে রোজা রাখা সম্ভব। তাই যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button