পানামা খাল দখলের হুমকি: ট্রাম্পের অবস্থান নিয়ে বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ

যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি এক ভাষণে প্রয়োজনে পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এর জবাবে জাতিসংঘে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ জানিয়েছে পানামা। এই ঘটনার ফলে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে।
গত সোমবার অভিষেক ভাষণে ট্রাম্প পানামা খালের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনা নিয়ে বক্তব্য দেন। তাঁর দাবি, চীন এই খাল নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করছে এবং পানামা সরকার তাদের সুযোগ করে দিচ্ছে। তবে পানামার প্রেসিডেন্ট হোসে রাউল মুলিনো এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন।
ট্রাম্পের এই হুমকির প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের কাছে পানামা একটি চিঠি পাঠিয়েছে। সেখানে জাতিসংঘের ঘোষণার ধারার উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ‘কোনো দেশের রাজনৈতিক স্বাধীনতা বা ভূখণ্ডের অখণ্ডতার বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ বা হুমকি দেওয়া যাবে না।’
১৯৭৮ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টারের উদ্যোগে পানামা খাল চুক্তি পাস হয়। ১৯৯৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চুক্তি অনুযায়ী এই খালের মালিকানা পানামা সরকারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এর পর থেকে খালের পরিচালনায় তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যিক জাহাজের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি এই খাল ব্যবহার করে।
পানামার জনগণের মধ্যে ট্রাম্পের বক্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। দেশটির শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা বিক্ষোভ করেছেন এবং পানামা সিটিতে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের সামনে ট্রাম্পের ছবি ও যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা পুড়িয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ট্রাম্প যদি সত্যিই পানামা খাল দখলের জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ করেন, তা গুরুতর যুদ্ধে রূপ নিতে পারে। পানামা খালের এলাকাটি প্রায় ৫০০ বর্গমাইল জুড়ে বিস্তৃত এবং দেশটির জনসংখ্যা প্রায় ৪৫ লাখ। সামরিক অভিযানের জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে প্রায় ৯০ হাজার সেনা মোতায়েন করতে হবে।
তবে এই ধরনের সামরিক পদক্ষেপ কংগ্রেসে প্রস্তাব পাস করার মাধ্যমে অনুমোদন পেতে হবে। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্প কংগ্রেসে পর্যাপ্ত সমর্থন পেতে ব্যর্থ হতে পারেন, কারণ উভয় দলের অনেক সদস্য এই ধরনের যুদ্ধের বিরোধিতা করবেন।
পানামা খালের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ট্রাম্পের অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। জাতিসংঘসহ বিভিন্ন দেশ বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
বিশ্ববাসীর প্রত্যাশা, পানামা খাল নিয়ে চলমান এই উত্তেজনা কূটনৈতিক আলোচনা ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে সমাধান হবে।