চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গড়ে উঠছে দেশের প্রথম ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন

প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস আরও নিখুঁত ও দ্রুততম করতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন রয়েছে দেশের প্রথম ওশান স্যাটেলাইট গ্রাউন্ড স্টেশন। বঙ্গোপসাগরকেন্দ্রিক এই স্টেশন ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে উপকূলীয় এলাকার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করতে পারবে, যা ঘূর্ণিঝড় বা জলোচ্ছ্বাসের মতো দুর্যোগের সময় তাৎক্ষণিক পূর্বাভাস দিতে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে সামুদ্রিক সম্পদ ব্যবস্থাপনায় এটি উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।
প্রকল্পটি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় এবং চীনের জাতীয় সমুদ্র গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সেকেন্ড ইন্সটিটিউট অব ওশানোগ্রাফি’র যৌথ উদ্যোগে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রায় ৭০ কোটি টাকার বাজেটে এই স্টেশনের নির্মাণকাজ চলছে, যার মধ্যে চীন সরবরাহ করছে ৬০ কোটির কারিগরি ও যন্ত্রাংশ সহায়তা। চবি কর্তৃপক্ষ নিজস্ব জনবল, নিরাপত্তা ও গবেষণা সুবিধা দিয়ে পরিচালনা করবে স্টেশনটি।
২০২3 সালের ডিসেম্বর মাসে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরের পর, ২০২৪ সালের ২৬ মার্চ থেকে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। বর্তমানে বাংলাদেশ দুর্যোগ পূর্বাভাসের জন্য যুক্তরাষ্ট্র, ভারত এবং অন্যান্য দেশের তথ্যের ওপর নির্ভরশীল, যা অনেক সময়সাপেক্ষ। কিন্তু এই স্টেশন চালু হলে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভরতা অনেকাংশে কমবে এবং পূর্বাভাসের সময়সীমা ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা আগেই নির্ধারণ করা যাবে।
প্রকল্পটির সমন্বয়ক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমুদ্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মোসলেম উদ্দিন জানান, চীনের এইচওয়াই-১এসআই/ডি ও এফওয়াই-৪বি স্যাটেলাইট ব্যবহার করে সমুদ্রপৃষ্ঠের তাপমাত্রা, বাতাসের গতি ও মেঘের অবস্থান বিশ্লেষণ করা সম্ভব হবে। এর মাধ্যমে দেশের নিজস্ব প্রযুক্তি সক্ষমতা বাড়বে, আর আবহাওয়ার পূর্বাভাস আরও নির্ভরযোগ্য হয়ে উঠবে।
সামুদ্রিক অর্থনীতির ক্ষেত্রেও এই স্টেশন একটি বড় সম্ভাবনা তৈরি করবে। বঙ্গোপসাগরের মাছ ধরার অঞ্চলগুলোর নির্ভুল চিহ্নিতকরণ, সামুদ্রিক সম্পদের কার্যকর ব্যবস্থাপনা এবং তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে এটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক হবে। সমুদ্রের তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি)-এর ১৪ নম্বর লক্ষ্য পূরণে এটি সরাসরি ভূমিকা রাখবে।
প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পর বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থাকে সুনির্দিষ্ট তথ্য সরবরাহ, প্রশিক্ষণ সেবা, সাবস্ক্রিপশন ভিত্তিক তথ্য বিক্রয় এবং ফিশিং অ্যালার্ট সিস্টেম চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। চীনের সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশি বিজ্ঞানীদের জন্য উচ্চতর প্রশিক্ষণ, শিক্ষাক্রম হালনাগাদ এবং কক্সবাজারে দ্বিতীয় ডেটা সেন্টার নির্মাণের কাজও এগিয়ে চলছে।
প্রকল্পের আওতায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই), মেশিন লার্নিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিংসহ আধুনিক প্রযুক্তি অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে। এছাড়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এবং বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ এর সঙ্গে সমন্বয়ে ডুয়াল-ইউজ চুক্তির কথাও চলছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন বলেন, এই স্টেশন চালু হলে বাংলাদেশ আবহাওয়া ও সমুদ্র পূর্বাভাসে আত্মনির্ভরশীল হয়ে উঠবে এবং সমুদ্র অর্থনীতিতে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।