NewsWorld - Bangla

কেন স্বর্ণে বিনিয়োগকে সবচেয়ে নিরাপদ ধরা হয়?

বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগের সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম হিসেবে স্বর্ণকে বিবেচনা করা হয়। অর্থনৈতিক মন্দা বা বৈশ্বিক অস্থিরতার সময়েও স্বর্ণের মূল্য সাধারণত স্থিতিশীল থাকে বা বেড়ে যায়। এই ধাতুর স্থায়ী মূল্য ও দীর্ঘ ইতিহাসের কারণে অনেকেই একে অর্থের স্থায়ী রূপ হিসেবেও বিবেচনা করেন।

বাংলাদেশেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে স্বর্ণে বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়ছে। বিশেষ করে ২০২৫ সালে সোনা অসাধারণ পারফরম্যান্স দেখিয়েছে। সারা বছর জুড়ে প্রায় ২০ বার এটি সর্বোচ্চ দামে পৌঁছেছে। সাময়িক দরপতন হলেও তা ক্ষণস্থায়ী ছিল। এমনকি বিশ্লেষকদের মতে, সামান্য দাম কমলেও সেটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ভালো সুযোগ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এখনকার বাজার পরিস্থিতিতে অনেক প্রচলিত অর্থনৈতিক বিশ্লেষণও সোনার দামের পূর্বাভাসে কাজে আসছে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০২৪ সালে সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ২৮ শতাংশ—যদিও তখন ডলার এবং শেয়ারবাজার দুটোই শক্তিশালী অবস্থানে ছিল। ২০২৫ সালে মার্চ-এপ্রিলে সোনার মূল্য আবারও উল্লেখযোগ্য হারে (১০% এবং ৬%) বেড়েছে।

বিশ্বব্যাপী বাণিজ্য সংঘাত, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র-চীন শুল্ক বিরোধ, বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন ৯০ দিনের জন্য পারস্পরিক শুল্ক স্থগিত করলেও চীনা পণ্যে শুল্ক বাড়ানোয় আবারও বাণিজ্য যুদ্ধের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এই ধরনের অনিশ্চয়তায় বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ বিকল্প হিসেবে স্বর্ণকেই বেছে নিচ্ছেন।

চলুন দেখে নিই, ২০২৫ সালে স্বর্ণে বিনিয়োগকে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলছে এমন ১০টি কারণ:

  1. শুল্ক যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অনিশ্চয়তা: পারস্পরিক শুল্ক আরোপ ও রাজনৈতিক টানাপোড়েন সোনাকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে তুলে ধরছে।
  2. কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রয়: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বছরে প্রায় ১,০০০ টনের বেশি সোনা কিনছে।
  3. মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির সম্ভাবনা বাড়ছে, যেখানে সোনা মুদ্রার অবমূল্যায়ের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দেয়।
  4. চীনে ইটিএফ বিনিয়োগ বৃদ্ধি: ২০২৫ সালে চীনে সোনা-ভিত্তিক ইটিএফ-এ বিনিয়োগ ১ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।
  5. সুদহার হ্রাস: যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমার সম্ভাবনা, সোনার দামের জন্য ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
  6. নিয়মিত রিটার্ন: গত দুই দশকে মাত্র দুই বছর সোনার মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে—এটা বিনিয়োগের ধারাবাহিকতা বোঝায়।
  7. ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা: ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, ইসরায়েল-হামাস সংঘর্ষসহ বৈশ্বিক অস্থিরতা সোনার চাহিদা বাড়াচ্ছে।
  8. ডলারের দুর্বলতা: অন্যান্য মুদ্রার তুলনায় ডলারের দরপতন সোনাকে তুলনামূলকভাবে আরও সাশ্রয়ী করছে।
  9. যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ সমস্যা: জাতীয় ঋণ ৩৬ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা সোনার দিকে ঝুঁকছেন।
  10. বাজার অস্থিরতা: শেয়ারবাজার যখন ওঠানামা করছে, তখন সোনা কিনে অনেকেই লাভবান হচ্ছেন।

শেষ কথায় বলা যায়, কাগজের মুদ্রার তুলনায় সোনা একটি বাস্তব সম্পদ, যার নিজস্ব মূল্য রয়েছে। নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা এবং দীর্ঘমেয়াদি আস্থার জন্য সোনায় বিনিয়োগ ধরা হচ্ছে সবচেয়ে নিরাপদ ও বিচক্ষণ সিদ্ধান্ত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button