রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি: মুমিনের জন্য ১১টি জরুরি আমল

পবিত্র রমজান মাস আসন্ন। এ মাস মুসলিম উম্মাহর জন্য বিশেষ গুরুত্ববহ, কারণ এটি সংযম, আত্মশুদ্ধি এবং আল্লাহর রহমত লাভের মাস। তাই রমজানের পূর্বেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ আমল শুরু করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে এ মহিমান্বিত মাসের ফজিলত ও কল্যাণ পুরোপুরি অর্জন করা যায়।
রমজানের পূর্ব প্রস্তুতির গুরুত্ব
রমজান ভোগবিলাস বা অতিরিক্ত ব্যবসা-বাণিজ্যের মাস নয়, বরং এটি কোরআন নাজিলের মাস, সংযমের মাস এবং ত্যাগের মাস। অতএব, রমজানের আগেই আমাদের বিশেষ কিছু করণীয় ঠিক করে নেওয়া উচিত, যাতে আত্মশুদ্ধির এ মাসের পূর্ণ ফজিলত লাভ করা যায়। সালাফে সালেহিনগণ (পূর্ববর্তী নেককার মুসলিমগণ) ছয় মাস আগে থেকেই রমজানের জন্য দোয়া করতেন:
“হে আল্লাহ! আপনি আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।”
রমজানের পূর্বে ১১টি জরুরি প্রস্তুতি
১. তওবা ও ইসতেগফার করা
রমজান শুরুর আগে আমাদের সমস্ত গুনাহর জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। কেননা, বিশুদ্ধ অন্তর ও আত্মশুদ্ধির মাধ্যমেই রমজানের প্রকৃত ফজিলত অর্জন সম্ভব। এজন্য বেশি বেশি পড়া উচিত:
اللَّهُمَّ اغْفِرْلِيْ (আল্লাহুম্মাগফিরলি)
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে ক্ষমা করুন।
২. রমজানের ফজিলত ও উপকারিতা জানা
কোরআন ও হাদিসে রমজানের যে ফজিলত ও উপকারিতার কথা বলা হয়েছে, তা অধ্যয়ন করা জরুরি। এতে রমজানের গুরুত্ব উপলব্ধি করা সহজ হবে এবং নেক আমলের প্রতি আগ্রহ বাড়বে। এ জন্য বেশি বেশি পড়া উচিত:
اللَّهُمَّ بَلِّغْنَا رَمَضَانَ (আল্লাহুম্মা বাল্লিগনা রামাদান)।
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের রমজান পর্যন্ত পৌঁছে দিন।
৩. রোজার মানসিক প্রস্তুতি নেওয়া
রমজানে পূর্ণ সওয়াব ও ক্ষমা লাভের জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হওয়া জরুরি। বিগত জীবনের ভুলত্রুটি সংশোধন করে রমজানে অধিক ইবাদত করার প্রতিজ্ঞা করা উচিত।
৪. পূর্বের কাজা রোজা আদায় করা
যদি কোনো অসুস্থতা বা অন্য কোনো কারণে পূর্ববর্তী রমজানের রোজা ছুটে গিয়ে থাকে, তবে তা শাবান মাসের মধ্যে আদায় করা উচিত। বিশেষত, নারীদের পূর্ববর্তী বকেয়া রোজা শোধ করে নেওয়া জরুরি।
৫. গুনাহ থেকে মুক্তির চেষ্টা করা
রমজান মাসে আল্লাহ অসংখ্য বান্দাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেন। কিন্তু এজন্য শিরক ও হিংসা থেকে মুক্ত থাকা অপরিহার্য। তাই এখন থেকেই এসব অভ্যাস বর্জন করা জরুরি।
৬. রোজার বিধি-বিধান সম্পর্কে জানা
রমজানের আগে রোজার নিয়ম-কানুন ও মাসআলা-মাসায়েল শিখে নেওয়া উচিত, যাতে অজ্ঞতা বা ভুলের কারণে রোজা নষ্ট না হয়।
৭. গত রমজানের অসম্পূর্ণ আমল চিহ্নিত করা
পূর্ববর্তী রমজানে যদি কোনো গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত করা না হয়ে থাকে, তবে এবার তা পূর্ণ করার পরিকল্পনা নেওয়া উচিত। যেমন:
- নিয়মিত কোরআন অধ্যয়ন করা হয়নি কেন?
- তারাবিহ পড়া হয়নি কেন?
- দান-সদকাহ করা হয়নি কেন?
- ইতিকাফ করা হয়নি কেন?
এ বছর যেন এসব আমল ঠিকমতো করতে পারি, সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করা জরুরি।
৮. শাবান মাসে নফল রোজার অভ্যাস গড়ে তোলা
নবিজি (সা.) শাবান মাসে প্রচুর নফল রোজা রাখতেন। তাই আমরাও বেশি বেশি নফল রোজা, ইবাদত-বন্দেগি এবং দান-সদকা করার অভ্যাস গড়ে তুলতে পারি।
৯. রমজানের জন্য সঠিক রুটিন তৈরি করা
রমজানে সময় যেন অপ্রয়োজনীয় কাজে নষ্ট না হয়, সেজন্য এখন থেকেই একটি ইবাদত-কেন্দ্রিক রুটিন প্রস্তুত করা উচিত। এতে ইবাদতের পাশাপাশি দৈনন্দিন কাজও সঠিকভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হবে।
১০. শাবান মাসের শেষে রমজানের চাঁদ অনুসন্ধান করা
শাবান মাসের ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় রমজানের চাঁদ খোঁজার সুন্নাত পালন করা উচিত। নবিজি (সা.) চাঁদ দেখে দোয়া করতেন:
اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُمَّ أَهِلَّهُ عَلَيْنَا بِالْأَمْنِ وَالإِيمَانِ وَالسَّلَامَةِ وَالإِسْلَامِ
অর্থ: আল্লাহ মহান! হে আল্লাহ! এ নতুন চাঁদকে আমাদের জন্য নিরাপত্তা, ঈমান, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন।
১১. রমজানের জন্য বিশেষ দোয়া করা
রমজানে সঠিকভাবে আমল করার তৌফিক চেয়ে এখন থেকেই আল্লাহর কাছে দোয়া করা উচিত:
اللَّهُمَّ سَلِّمْنِي لِرَمَضَان، وَسَلِّمْ رَمَضَانَ لِي، وَتَسَلَّمْهُ مِنِّي مُتَقَبَّلًا
অর্থ: হে আল্লাহ! আমাকে রমজানের জন্য সুস্থ রাখুন, রমজানকে আমার জন্য কল্যাণকর করুন এবং আমার সব আমল কবুল করুন।
রমজানের পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি এমন একটি মাস, যার প্রতিটি মুহূর্ত কল্যাণ ও রহমতে ভরপুর। তাই এ মাসের আগেই শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক প্রস্তুতি গ্রহণ করে রমজানকে সার্থক করে তোলা উচিত।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে রমজানের ফজিলত লাভের তৌফিক দান করুন। আমিন।