বিমানের চাকা পড়ে যাওয়ার ঘটনায় যা জানা গেল

গত শুক্রবার কক্সবাজার থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ড্যাস-৮ উড়োজাহাজ আকাশে ওঠার পর পেছনের একটি চাকা খুলে পড়ে যায়। তবে সৌভাগ্যক্রমে বিমানটি হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিরাপদে জরুরি অবতরণ করতে সক্ষম হয়।
এই ঘটনার পর বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দায়িত্বহীনতা নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়। ইতোমধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটির নেতৃত্বে আছেন বিমানের চিফ অব সেইফটি ক্যাপ্টেন এনাম তালুকদার।
যদিও তদন্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ হয়নি, তবে সংশ্লিষ্ট অনেকেই মনে করছেন, ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের গাফিলতির কারণেই এই ঘটনা ঘটেছে।
এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিটি ল্যান্ডিং গিয়ারের নির্দিষ্ট সময়সীমা ও ফ্লাইট সাইকেল থাকে, যার পর তা পরিবর্তন বা রক্ষণাবেক্ষণ আবশ্যক। ফ্লাইটের আগে নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি উড়োজাহাজে একজন লাইসেন্সধারী ইঞ্জিনিয়ার ইন্সপেকশন করেন। এই ফ্লাইটের ক্ষেত্রেও ইন্সপেকশন করা হয়েছিল এবং ‘হুইল কন্ডিশন স্যাটিসফ্যাকটরি’ রিপোর্ট করা হয়েছিল। তাই চাকা খুলে পড়ার ঘটনা অস্বাভাবিক।
বিমান সূত্র জানায়, ল্যান্ডিং গিয়ারের রক্ষণাবেক্ষণ ছয় মাস পরপর করার নিয়ম রয়েছে। তবে এই ফ্লাইটের গিয়ারের রক্ষণাবেক্ষণ গত দেড় বছর ধরে করা হয়নি। এতে গ্রিজ শুকিয়ে গিয়েছিল, যার ফলে উড্ডয়নের সময় চাকা খুলে পড়ে।
জানা গেছে, একই দিন এই উড়োজাহাজটি সিলেট রুটেও চলাচল করেছে। কক্সবাজার-ঢাকা রুটে যাত্রার আগে লগবুকে ‘সব হুইল ঠিক আছে’ বলে উল্লেখ ছিল। উড়োজাহাজটির মোট ল্যান্ডিং হয়েছে ৯,৭৬৮ বার।
এই ঘটনায় চার সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে ক্যাপ্টেন এনাম তালুকদার প্রধান, ক্যাপ্টেন আনিসুর রহমান সদস্য, ইঞ্জিনিয়ার মো. নাজমুল হক সদস্য সচিব এবং একজন পাইলট প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন। কমিটিকে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে মূল কারণ উদঘাটন এবং ভবিষ্যতে এমন ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিমানের জনসংযোগ কর্মকর্তা রওশন কবীর বলেন, প্রতিটি উড়োজাহাজের ইন্সপেকশন একজন লাইসেন্সপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা সম্পন্ন হয়। রক্ষণাবেক্ষণের নিয়ম না মানলে বেবিচক (বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) ফ্লাইট অনুমোদন দেয় না। পাশাপাশি আয়াটা ও আইকাও-এর নিয়ম মেনেই সবকিছু পরিচালিত হয়।
তিনি আরও জানান, যেকোনো যন্ত্রচালিত ব্যবস্থায় যান্ত্রিক সমস্যা হতে পারে। তবে এই ঘটনায় তদন্ত করে কারও গাফিলতি থাকলে তা প্রকাশ্যে আসবে।
প্রসঙ্গত, কক্সবাজার বিমানবন্দর ছাড়ার সময় বিমানের বাম পাশের একটি চাকা খুলে পড়ে যায়। তবে পাইলট দক্ষতার সঙ্গে প্রথম চেষ্টাতেই বিমানটি নিরাপদে অবতরণ করাতে সক্ষম হন, ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।