চাকরির লড়াইয়ে কতটা প্রস্তুত আমাদের শিক্ষার্থীরা?
শিক্ষাজীবন হলো মানুষের ভবিষ্যৎ গড়ার ভিত্তি। এখান থেকেই শুরু হয় জীবনের বাস্তবতা বোঝার প্রক্রিয়া। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় শিক্ষাজীবনের প্রধান লক্ষ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে কেবল ভালো চাকরি পাওয়া। তবে শিক্ষাজীবন শেষে আমরা কি সত্যিই চাকরির বাজারের প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য প্রস্তুত?
শিক্ষিত কিন্তু বেকার: একটি ভয়াবহ চিত্র
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) শ্রমশক্তি জরিপ ২০২৩ অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৬৩ লাখ মানুষ বেকার, যার মধ্যে ৮৭ শতাংশই শিক্ষিত বেকার। আরও ভয়াবহ তথ্য হলো, ২১ শতাংশ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীও কোনো কর্মসংস্থানে যুক্ত নন।
বিশ্ববিদ্যালয় শেষ করে চাকরির বাজারে প্রবেশের পর অনেক শিক্ষার্থী কঠিন বাস্তবতার সম্মুখীন হন। চতুর্থ বর্ষ শেষ করা শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে ভালো জানেন চাকরি পাওয়ার জন্য কী পরিমাণ প্রতিযোগিতা করতে হয়। কিন্তু এই প্রতিযোগিতার জন্য কি তারা শিক্ষাজীবনে যথেষ্ট প্রস্তুতি নিয়েছেন?
বিশ্ববিদ্যালয় কি দক্ষতা উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে?
বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় প্রয়োজনীয় দক্ষতা উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। একাধিক সমীক্ষায় দেখা গেছে, অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় এখন বেকার তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার মতো পুরনো প্রতিষ্ঠান থেকেও প্রতি বছর উচ্চশিক্ষার জন্য মাত্র ৩ থেকে ৫ জন শিক্ষার্থী বিদেশে সুযোগ পান, বিসিএস পরীক্ষায় তাদের অংশগ্রহণও নগণ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি শুধু পাঠ্যসূচি ভিত্তিক শিক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে এবং বাস্তব দক্ষতা অর্জনের ব্যবস্থা না রাখে, তাহলে শিক্ষার্থীরা কীভাবে চাকরির বাজারে সফল হবেন?
লক্ষ্যহীন শিক্ষার্থী: ব্যর্থতার মূল কারণ
ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বলেন, “১০০ জন ছাত্রের মধ্যে ৭০ জনই জানে না তাদের লক্ষ্য কী। ক্যাম্পাসে দলবদ্ধ পড়াশোনা কিংবা ক্যারিয়ারবিষয়ক আলোচনা খুব কম দেখা যায়। কিন্তু খেলাধুলা, আড্ডা এবং সময় অপচয় করা ব্যাপক হারে লক্ষ করা যায়। ফলে ডিগ্রি অর্জনের পর হতাশায় নিমজ্জিত হতে হয়, যা অনেক সময় আত্মহত্যার মতো চরম সিদ্ধান্তে নিয়ে যায়।”
শিক্ষার্থীদের উচিত বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শুরুতেই লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং সে অনুযায়ী দক্ষতা অর্জনের জন্য কাজ করা। অন্যথায়, চাকরির বাজারের কঠিন প্রতিযোগিতায় তারা পিছিয়ে পড়বেন।
কীভাবে প্রস্তুতি নেওয়া উচিত?
- লক্ষ্য নির্ধারণ করুন: পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের আগ্রহ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
- দক্ষতা উন্নয়ন করুন: ইংরেজি, কম্পিউটার, প্রেজেন্টেশন, ডাটা অ্যানালিটিক্স ও অন্যান্য বাস্তব দক্ষতা অর্জনের দিকে মনোযোগ দিন।
- স্টাডি গ্রুপ ও গবেষণায় যুক্ত থাকুন: শুধুমাত্র ক্লাসের পড়া মুখস্থ না করে আলোচনা ও গবেষণার মাধ্যমে জ্ঞান অর্জন করুন।
- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর দায়িত্ব: শিক্ষার্থীদের দক্ষতা উন্নয়নে ল্যাব ও গবেষণার সুযোগ বাড়াতে হবে।
শিক্ষাজীবনের সঠিক ব্যবহারই চাকরির নিশ্চয়তা
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের শুধু ডিগ্রি অর্জনের চিন্তা করলে চলবে না, বরং চাকরির বাজারের জন্য বাস্তব দক্ষতা অর্জনের দিকেও মনোযোগী হতে হবে। অন্যথায়, ডিগ্রি থাকা সত্ত্বেও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে না। তাই শিক্ষাজীবনকেই ক্যারিয়ার প্রস্তুতির শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে কাজে লাগাতে হবে।