অধঃপতনের পাঁচ কারণ:কোরআন ও হাদিসের আলোকে সতর্কবার্তা

মানুষের পাপ ও অন্যায়ের কারণে ব্যক্তি থেকে সমাজ, এমনকি পুরো জাতিও অধঃপতনের শিকার হয়। কোরআন ও হাদিসে এমন কিছু অপরাধের উল্লেখ রয়েছে, যা কোনো জাতির মধ্যে প্রসার লাভ করলে তাদের উন্নতি বাধাগ্রস্ত হয় এবং তারা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে যায়। ইবনে মাজাহ’র একটি হাদিসে বলা হয়েছে, পাঁচটি অপরাধ যদি কোনো জাতির মধ্যে প্রচলিত হয়ে যায়, তবে তাদের পতন অবশ্যম্ভাবী।
১. অশ্লীলতার বিস্তার
কোরআনে আল্লাহ বলেন—
“হে মানুষ, ভূমণ্ডলে যা কিছু হালাল ও পবিত্র, তা থেকে আহার কর এবং শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু। সে তোমাদেরকে অসৎ ও অশ্লীল কাজের নির্দেশ দেয় এবং আল্লাহ সম্পর্কে এমন কিছু বলায়, যা তোমরা জানো না।”
📖 (সুরা বাকারা: ১৬৮-১৬৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“যখন কোনো জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা (যেমন সুদ, ঘুষ, ব্যভিচার) ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেখানে মহামারি ও এমন সব ব্যাধি দেখা দেয়, যা আগে কখনও ছিল না।”
২. ওজনে কম দেওয়া
ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বচ্ছতা রক্ষার জন্য কোরআনে স্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। আল্লাহ বলেন—
“তোমরা পরিপূর্ণভাবে ওজন দাও এবং সঠিকভাবে দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করো।”
📖 (সুরা বনি ইসরাইল: ৩৫)
রাসুলুল্লাহ (সা.) হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন—
“যে জাতি ওজন ও পরিমাপে কারচুপি করে, তাদের ওপর দুর্ভিক্ষ, কঠিন বিপদ-মসিবত ও জালেম শাসকদের নির্যাতন নেমে আসে।”
৩. যাকাত না দেওয়া
যাকাত হলো গরিবের হক, যা ধনীদের সম্পদের মধ্যে নির্ধারিত আছে। কোরআনে বলা হয়েছে—
“তাদের ধন-সম্পদে নির্ধারিত অংশ রয়েছে প্রার্থী ও বঞ্চিতদের জন্য।”
📖 (সুরা জারিয়াত: ১৯)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“যখন কোনো জাতি যাকাত আদায় বন্ধ করে দেয়, তখন আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। যদি ভূমিতে পশুপাখি না থাকত, তবে আর কখনো বৃষ্টি হতো না।”
📖 (ইবনে মাজাহ: ৪০১৯)
৪. অঙ্গীকার ভঙ্গ করা
আল্লাহর সঙ্গে কৃত ঈমান ও ইবাদতের অঙ্গীকার এবং পারস্পরিক চুক্তি লঙ্ঘন করা মহাপাপ। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, কোরআনে অঙ্গীকার ভঙ্গের অর্থ হলো, আল্লাহর দেওয়া বিধান ও হালাল-হারামের সীমারেখা অমান্য করা।
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“যে জাতি আল্লাহ ও তার রাসুলের (সা.) সঙ্গে করা অঙ্গীকার ভঙ্গ করে, তাদের ওপর বিজাতীয় দুশমনকে ক্ষমতাসীন করা হয়। সে তাদের ধন-সম্পদসহ সবকিছু কেড়ে নেয়।”
৫. শরিয়াবহির্ভূত বিচারব্যবস্থা
কোরআনে বলা হয়েছে—
“হুকুম বা কর্তৃত্বের মালিক একমাত্র আল্লাহ। তিনিই সত্য কথা বলেন এবং সর্বোত্তম ফায়সালাকারী।”
📖 (সুরা আনয়াম: ৫৭)
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন—
“যখন শাসকরা আল্লাহর বিধান অনুসারে বিচার না করে এবং শরিয়তের আইন অগ্রাহ্য করে, তখন আল্লাহ তাদের পরস্পরের মধ্যে দাঙ্গা-হাঙ্গামা বাঁধিয়ে দেন।”
📖 (ইবনে মাজাহ: ৪০১৯)
জাতীয় ও সামাজিক পতন রোধ করতে এসব অনাচার থেকে দূরে থাকা আবশ্যক। সততা, ন্যায়বিচার, পরোপকারিতা, এবং আল্লাহর বিধান অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করলেই সমাজে শান্তি ও কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হতে পারে।